আটলান্টায় বদলে যাওয়া সাকিব, এখনো বিদায় নেয়ার স্বপ্ন দেখেন দেশের মাটিতেই
৯৭ প্রতিবেদক: নাজিফা তাসনিম
প্রকাশ: 4 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 মিনিট আগে
আটলান্টায় বদলে যাওয়া সাকিব, এখনো বিদায় নেয়ার স্বপ্ন দেখেন দেশের মাটিতেই
আটলান্টায় বদলে যাওয়া সাকিব, এখনো বিদায় নেয়ার স্বপ্ন দেখেন দেশের মাটিতেই
বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যেন আবার খুঁজে পেয়েছেন নিজের ভেতরের শিশুটিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাইনর লিগ ক্রিকেট দল আটলান্টা ফায়ারের হয়ে খেলার সময় তাকে দেখা গেছে ভিন্ন এক রূপে হাসিখুশি, স্বচ্ছন্দ ও নির্লিপ্ত।
দলের শিরোপা জয়ের পর দলীয় বৈঠকে সাবেক রাজস্থান রয়্যালস কোচ ও বর্তমানে আটলান্টা ফায়ারের প্রধান কোচ মন্টি দেশাই মজার ছলে বলেছিলেন, “তোমার ভেতরের শিশুটি যেন বেরিয়ে এসেছে।”
সাধারণত মাঠে তীক্ষ্ণ মনোযোগী ও কঠোর মানসিকতার জন্য পরিচিত সাকিবকে এবার দেখা গেছে ঠিক উল্টো এক চরিত্রে। সতীর্থরা বলছেন, আমেরিকায় তিনি যেন ফিরে গিয়েছিলেন তার তরুণ বয়সের ক্রিকেট আনন্দে।
দলটির ব্যাটার সাগর প্যাটেল বলেন, “ওই সময় সাকিব ভাই সবসময় হাসতেন। মজা করতেন, ঠাট্টা করতেন। মনে হচ্ছিল, খেলাটা উপভোগ করছেন শুধুই ভালোবাসা থেকে, কোনো বাধ্যবাধকতা থেকে নয়।”
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে কিছুটা ‘স্বেচ্ছানির্বাসনে’ থাকা সাবেক অধিনায়ক এখন নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে খেলে তিনি যেন আবার খুঁজে পেয়েছেন খেলাধুলার সেই নির্মল আনন্দ। নিজেও ক্রিকবাজকে বলেছেন, “আমার অনেক ভালো লেগেছে। এখানে অনেক স্থানীয় খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। মনে হয়েছে, আবার আন্ডার ১৯ সময়ের ক্রিকেটে ফিরে গেছি।”
মাঠে বা হোটেলে কোন জায়গাতেই কোনো তারকাসুলভ আচরণ ছিল না তার। সবার মতোই সাধারণ দুই তারার হোটেলে থেকেছেন, দলের সঙ্গে খাবার খেয়েছেন। এমনকি ফিল্ডিংয়ের সময়ও বেছে নিয়েছেন কঠিন পজিশনগুলো। চোখের সমস্যায় ভুগলেও নেটে ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করেছেন প্রতিটি ম্যাচের আগে।
সতীর্থ সানি প্যাটেল বলেন, “আমরা ওনাকে নিয়ে অনেক কিছু শুনেছিলাম। কিন্তু কাছে এসে দেখলাম, কতটা বিনয়ী আর পরিশ্রমী একজন মানুষ।”
সাকিবের বিষয়ে নানা সময় নানা বিতর্ক তৈরি হলেও আটলান্টা ফায়ারের সতীর্থদের চোখে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ সহজ, মাটির মানুষ। খেলা শেষে বাচ্চারা কিংবা তরুণ ক্রিকেটাররা ছবি বা অটোগ্রাফ চাইলে তিনি কখনোই না বলেননি।
অনেকে মনে করেন, সাকিব অর্থনির্ভর একজন ক্রিকেটার। সেই ধারণা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সাকিব বলেন, “যা করেছি, সেটা দেশে আগে কেউ করেনি। তাই অনেকের কাছে বিষয়টা হজম করা কঠিন ছিল। এখন অন্যরা করলে সমস্যা হয় না, কারণ আমি পথ দেখিয়েছি।”
মাইনর লিগের শেষ পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন তিনি, তাও অনেক কম পারিশ্রমিকে শুধুমাত্র একটি পুরনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে। দলীয় মালিক হাসান তারেকের প্রতি দেওয়া কথা রাখতেই এই সফর।
এখনও চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি। শিগগিরই ফ্লোরিডায় চোখের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন।
সবশেষে, তিনি জানিয়েছেন, যদি সুযোগ মেলে তবে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চান দেশের মাটিতে, মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। “এটা আমার জন্য না, বরং আমার ভক্তদের জন্য। যদি সেটা সম্ভব হয়, তবে সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর বিদায়।”