ঐতিহাসিক ১৭ মে: বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয় নিয়ে আকরাম খানের ফিরে দেখা

৯৭ প্রতিবেদক: শিহাব আহসান খান

প্রকাশ: 5 মাস আগে আপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
ঐতিহাসিক ১৭ মে: বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয় নিয়ে আকরাম খানের ফিরে দেখা

ঐতিহাসিক ১৭ মে: বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয় নিয়ে আকরাম খানের ফিরে দেখা

ঐতিহাসিক ১৭ মে: বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয় নিয়ে আকরাম খানের ফিরে দেখা

১৯৮৬ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু। টানা ২২ ম্যাচে পরাজয়ের গ্লানি। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৭ মে—একটি দিন, যা বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস। কেনিয়ার বিপক্ষে পাওয়া সেই ৬ উইকেটের জয়ই ছিল প্রথম ওয়ানডে জয়। আজ তার ২৭ বছর পূর্তি।

কোকা-কোলা ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজে স্বাগতিক ভারতের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ ও কেনিয়া। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে কেনিয়াকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ দল। 

তৎকালীন অধিনায়ক আকরাম খান আজও ভুলতে পারেন না সেদিনের উল্লাস। ক্রিকেট৯৭-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিরে গেলেন সেই দিনটিতে।

চোট নিয়েও নেতৃত্বে

হায়দ্রাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে খেলারই কথা ছিল না আকরাম খানের। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। তবে দেশের ক্রিকেটের প্রয়োজনে চারটি ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নামেন পরের ম্যাচে।

'চন্ডিগড়ে (পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম) আমি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারিনি, তবে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে আমি ম্যানেজারের (সেলিম আবেদিন চৌধুরী) সঙ্গে কথা বলি, ৪ টা ইঞ্জেকশন নিয়ে ম্যাচ খেলতে নামি। কেনিয়া কিন্তু তখন বেশ শক্ত দল, স্টিভ টিকোলো, আসিফ করিম, হিতেশ মোদিদের মত ক্রিকেটাররা খেলতেন,' বললেন আকরাম। 

রান তাড়ার আত্মবিশ্বাসের পেছনে মইনুদ্দৌলা স্মৃতি

কেনিয়া প্রথমে ব্যাট করে তোলে ২৩৬ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ রফিক, ২টি করে খালেদ মাহমুদ ও এনামুল হক মনির, ১টি নেন মোরশেদ আলি খান।

এই লক্ষ্য তাড়া করার আত্মবিশ্বাস এসেছিল হায়দ্রাবাদেই খেলা এক ঘরোয়া টুর্নামেন্ট থেকে।

আকরাম খান বলেন, 'আমি হায়দ্রাবাদের মাঠে ঐ ম্যাচের আগেও খেলেছিলাম। ঐতিহাসিক মইনুদ্দৌলা গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টে আমার সেঞ্চুরিও ছিল। তাই বিশ্বাস ছিল এই লক্ষ্য ছোঁয়া সম্ভব।' 

রফিক-আতহারের উদ্বোধনী জুটি

ওই ম্যাচে দ্বিতীয়বার আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ওপেন করতে নামেন মোহাম্মদ রফিক— প্রথমবার নেমেছিলেন ১৯৯৭ সালে আকরামের সিদ্ধান্তেই। দ্বিতীয় ম্যাচেই বাজিমাত! ৮৭ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৭৭ রান, যা ছিল রফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ।

উদ্বোধনী জুটিতে আতহার-রফিক তোলেন ১৩৭ রান। "আমাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছিল আতহার-রফিক জুটি। উদ্বোধনী জুটিতেই ১০০ এর বেশি (১৩৭) রান এসেছিল।" বলেন আকরাম। আতহারের ৯১ বলে ৪৭ রান সেদিন ছিল ধীরগতির অথচ কার্যকর।

জয় নিশ্চিত করে বুলবুল-আকরামের জুটি

তিনে নেমে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু করেন ১৪ রান। এরপর উইকেটে আসেন অধিনায়ক আকরাম। তাঁর ৫১ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে ছিল চারটি চার। বুলবুলের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি তখন বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত করে দেয়।

আকরাম-বুলবুল জুটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আকরাম বলেন, জুটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আকরাম খান বলেন, 'আমি মনে হয় ৩০ এর বেশি রান করেছিলাম (৩৯)। আমি চালিয়ে খেলেছিলাম, আমিনুল ইসলামকেও চালিয়ে খেলতেই বলেছিলাম, তবে উনি ধরেই খেলেছিলেন (হাসি)। ম্যাচ জিতিয়েই অবশ্য মাঠ ছেড়েছিলেন।' 

শেষ দিকে বুলবুল অপরাজিত থাকেন ২০* রানে, আর নাইমুর রহমান দুর্জয় করেন ৪*।

২ ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। অলরাউন্ড নৈপুণ্যের জন্য ম্যাচসেরা হন মোহাম্মদ রফিক।

উৎসব আর হতাশা—দুই মেরুতে আকরাম

সেই ঐতিহাসিক জয়ের স্মৃতি আজও আবেগ জাগায় আকরামের মনে। তবে একই সঙ্গে ক্ষোভ ও হতাশাও কাজ করে বর্তমান ওয়ানডে দলের অবস্থান নিয়ে।

"২৭ বছর বাদে আমাদের ওয়ানডে দলটার অবস্থান আমাকে আশান্বিত করে না। আমি যখন নির্বাচক ছিলাম তখন র‍্যাংকিংয়ে ৭ এ উঠেছিলাম। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ের ৬ এও উঠেছিলাম। সেই দল এখন ১০ নম্বরে!"

সাকিব, তামিম, মাশরাফিদের যুগ শেষ হওয়াকে মানলেও ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন তিনি।

"লিটন-শান্তরা তারকা হবার মত যোগ্য, কিন্তু ধারাবাহিকতা না থাকলে সেটা সম্ভব নয়। তারপরও আশা তো থাকেই।"

আশার কথা বলেছেন আকরাম, কিন্তু সেই আশার পালেও লাগতে হবে পারফরম্যান্সের হাওয়া। ২৭ বছর আগের ঐতিহাসিক দিনে যে রকম সাড়া পড়েছিল গোটা দেশে, তেমন দিন নিয়মিত কবে ফিরবে—সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কোটি ভক্তের মনে।