তানভীর আহমেদ- খেলার টানে পৃথিবী পাড়ি দেওয়া এক বাংলাদেশি বিশ্বপরিব্রাজক
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 6 ঘন্টা আগে আপডেট: 5 মিনিট আগে
তানভীর আহমেদ- খেলার টানে পৃথিবী পাড়ি দেওয়া এক বাংলাদেশি বিশ্বপরিব্রাজক
তানভীর আহমেদ- খেলার টানে পৃথিবী পাড়ি দেওয়া এক বাংলাদেশি বিশ্বপরিব্রাজক
বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়, বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটস, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। এসব নামের সঙ্গে তানভীর আহমেদের নাম জড়িয়ে আছে। তবে ক্রীড়া সংগঠক পরিচয়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে তাঁর আরেকটি পরিচয়: তিনি এখন পরিচিত এক বিশ্বপরিব্রাজক হিসেবে, যিনি খেলাধুলার টানে একশোটি দেশ ঘুরেছেন।
তাঁর ভ্রমণ শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে ভারত সফরের মাধ্যমে। পরের বছরই তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই ঐতিহাসিক মাঠে, যেখানে হায়দরাবাদে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায়। সেটিই যেন তাঁর জীবনযাত্রার মানচিত্রে প্রথম আলোকরেখা হয়ে উঠেছিল। সেই আলো তাঁকে নিয়ে গেছে পৃথিবীর একের পর এক শহর, স্টেডিয়াম এবং সংস্কৃতির ভেতর। বাংলাদেশের বাইরে জাতীয় দলের অধিকাংশ জয়ের তিনি সরাসরি সাক্ষী। এখন যেসব দর্শকের মাথায় বা কোলে দেখা যায় প্রতীকী বাঘ, তার প্রথম উদ্ভাবনও পৃথিবী দেখেছিল তাঁর মাথায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক দর্শকদের তালিকা করলে প্রথম কয়েকজনের মাঝেই থাকবেন তানভীর। ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশের খেলা থাকা প্রতিটি ক্রিকেট বিশ্বকাপে তাঁর উপস্থিতি ছিল নিশ্চিত। ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়া আসর ছাড়া অন্যান্য সব টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন গ্যালারিতে।
ফুটবলও তাঁর আরেক অনুরাগের জায়গা। ২০০৬ সাল থেকে প্রতিটি ফুটবল বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে তাঁকে দেখা গেছে পতাকা হাতে, উচ্ছ্বাসে ভরা দর্শকের ভিড়ে। কোপা আমেরিকা, ইউরো কাপ, অসংখ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকসহ আরও কয়েকটি অলিম্পিক গেমসও তিনি দেখেছেন কাছ থেকে।
তানভীর আহমেদের ভ্রমণ কেবল বড় শহর বা জনপ্রিয় গন্তব্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিদেশ সফরের নেশায় তিনি পা রেখেছেন উগান্ডা, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, সান মারিনো, সেশেলসের মতো কম পরিচিত দেশেও।
যে একশোটি দেশে তিনি সফর করেছেন, প্রতিটি দেশের একটি করে মুদ্রা তিনি যত্নে তুলে রেখেছেন নিজের সংগ্রহে। খেলার জন্য যেসব দেশে গেছেন, সেসব ইভেন্টের কোট পিন এবং প্রতিটি ক্রিকেট দলের অটোগ্রাফসহ ক্যাপও আছে তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে। ফিফা, আইসিসি এবং এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিলের আয়োজিত প্রায় প্রতিটি আসরেই নিজের সামর্থ্যে তিনি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং।
২০০৬ সালে যখন ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনের সুযোগ নিশ্চিত হয়, তখন তিনি শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মেলবোর্নে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেছিলেন। একটি দেশের প্রতি ভালোবাসাকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার এমন দৃশ্য খুব কম মানুষেরই জীবনে আসে।
একশো দেশের ভ্রমণ সীমা ছুঁয়ে ফেলার পর তিনি এই আনন্দ ভাগ করে নিলেন বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে। ডেইলি স্টার ভবনের মাহমুদ সেমিনার হলে আয়োজন করা হয় স্মৃতিচারণের এক উষ্ণ সন্ধ্যা। সেখানে সাজানো ছিল তানভীরের ভ্রমণ করা সব দেশের তালিকা। প্রদর্শিত ছিল তাঁর সংগ্রহের মুদ্রা, কোট পিন, স্মারক এবং ভ্রমণের সঙ্গী হয়ে ওঠা নানা স্মৃতিচিহ্ন। যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভ্রমণে ছিলেন বা যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর এই আকাঙ্ক্ষার পথচলা, তাঁরা নিজেরাই তুলে ধরেছিলেন তাঁর গল্পের নানা অধ্যায়।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় এবং কুইজ প্রতিযোগিতায় দেওয়া হয় বিশেষ পুরস্কার।
তানভীর আহমেদের ভ্রমণগাথা আসলে পৃথিবীকে দেখে আসার গল্প। খেলার সীমানা পেরিয়ে মানুষের জীবন, সংস্কৃতি এবং আবেগকে ছুঁয়ে দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তাঁর প্রতিটি ভ্রমণ এক একটি গল্প। প্রতিটি ছবি একটি জানালা। প্রতিটি স্টেডিয়াম এক নতুন অধ্যায়। তিনি শুধু ম্যাচ দেখেন না, তিনি খেলাকে নিজের জীবনের কম্পাস বানিয়ে পৃথিবীকে চিনে নেন বারবার।
খেলাপাগল এই বিশ্বপরিব্রাজকের গল্প তাই একান্তই চলার গল্প। স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং নিরন্তর আবেগের গল্প।
