Image

সিলেটে জুলিয়ান উডের মন কেড়েছেন জাকের আলী অনিক

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 5 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
সিলেটে জুলিয়ান উডের মন কেড়েছেন জাকের আলী অনিক

সিলেটে জুলিয়ান উডের মন কেড়েছেন জাকের আলী অনিক

সিলেটে জুলিয়ান উডের মন কেড়েছেন জাকের আলী অনিক

বাংলাদেশের পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সিলেট ক্যাম্পে বিশেষ নজর কেড়েছেন তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলী অনিক। ব্যাট হাতে বড় শট খেলার সামর্থ্য, আত্মবিশ্বাস আর নিবেদন দিয়ে তিনি মুগ্ধ করেছেন এই ইংলিশ কোচকে। বয়সভিত্তিক দল থেকে ক্রিকেটে বন্ধু জাকির হাসানের পাশে শুরু করা যাত্রা থেকে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া পর্যন্ত জাকেরের গল্পটা কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। কিন্তু প্রতিটি ধাপে নিজেকে প্রমাণ করে তিনি এখন উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, বিশেষ করে পাওয়ার হিটিংয়ে।


জাকির-জাকের, দুই বন্ধু; ক্রিকেট পাঠশালাতেও ছিলেন একে অপরের সঙ্গী। ক্রিকেটে দুজনের ভূমিকাও এক, পরিচয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছন সামলানোর পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দুজনে উইকেটের সামনে সমান পারদর্শী। ভিন্নতা শুধু ব্যাটিং পজিশনে, জাকির খেলেন টপ অর্ডারে, জাকের ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে।

ভিন্নতা শুধু ব্যাটিং পজিশনে নয়, একটা সময় ব্যাটিং দক্ষতায় জাকিরের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন জাকের। বিষয়টি প্রথম পরিলক্ষিত হয় ২০১৬ সালে।

জাকির-জাকের তখন মাত্র অনূর্ধ্ব-১৯ দলের গণ্ডি পেরিয়ে সিলেট বিভাগীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। জাতীয় ক্রিকেট লিগকে সামনে রেখে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন সিলেটের ক্রিকেটাররা, সেই অনুশীলনেও ঘাম ঝরাচ্ছিলেন জাকের।

সেই ক্যাম্পে ব্যাটার হিসেবে নামডাক ছিল জাকির হাসানের। উইকেটকিপিং ছিল তার বাড়তি যোগ্যতা, ফলে জাকেরকে বাদ দিয়ে জাকিরকে নিয়েই দল সাজায় সিলেট।

তবে সিলেট দলে জায়গা হারিয়ে জাকের থেমে থাকেননি। নিজের ব্যাটিং উন্নত করতে মনোযোগী হন তিনি। ব্যাটিংয়ে শাণ দিতে সিলেটের বাইরেও খেলতে যান, একাধিক সেঞ্চুরি করে নিজেকে প্রস্তুত করেন নিজের শহরের জন্য।

তখন অলক-রাজিনদের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন অন্য তরুণরা। ফলে সিলেট দলের দরজা খুলে যায় জাকেরের জন্য। অভিষেক ম্যাচেই হাঁকান ফিফটি, ৭০’র ঘরে এক ইনিংসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা জাকেরকে এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এরপর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যেখানেই খেলেছেন, ব্যাটিং-কিপিং দুই ভূমিকাতেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। চার দিনের ম্যাচ হোক কিংবা একদিনের; টি-টোয়েন্টিতে তো তার নামের পাশে ‘পাওয়ার হিটার’ তকমা যুক্তই হয়ে গেছে।

জাতীয় দলের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন জাকের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। এক ইনিংসে যা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও আলোড়ন তুলেছিলেন জাকের।

তবে শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্ট-ওয়ানডে ফরম্যাটেও দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরছেন জাকের। এখনও পর্যন্ত ৬ টেস্টে ৩০ গড়ে করেছেন ৩৩৭ রান।

বেশিরভাগ সময় জাকের ব্যাট হাতে নামেন দলের বিপর্যয়ের সময়। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার যখন ভেঙে পড়ে, তখন টেলেন্ডারদের নিয়ে দলের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব কাঁধে নেন তিনি। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রায় প্রতি টেস্টেই রেখেছেন নিজের ছাপ। প্রথম চার টেস্টেই চারটি ফিফটি তারই প্রমাণ।

অন্যদিকে, ১০ ওয়ানডেতে ৪৫ গড়ে ৩ ফিফটিতে করেছেন ৩৬৬ রান। যা বলছে, ওয়ানডেতেও একটি প্রতিশ্রুতিশীল ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে তার জন্য।

টেস্ট-ওয়ানডে যেন বোনাস, আসল আলোচনায় জাকের থাকেন পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত তার ৩৭টি ছক্কাই তার প্রমাণ। যেখানে তিনি ইতোমধ্যে ছুঁয়ে গেছেন নিজের ক্রিকেটিং আইকন মুশফিকুর রহিমকে। সেই মুশফিককে ছাড়িয়ে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড নিজের করতে মরিয়া এই তরুণ।

এ যাত্রায় ‘পাওয়ার হিটার’ তকমা ইতোমধ্যে তার নামের পাশে জুড়ে গেছে, এখন লক্ষ্য সেটাকে আরও শাণিত করা। আর সেই শাণ দিতেই বিসিবি ডেকেছে পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডকে। তবে লক্ষ্য শুধু জাকের নয়, জুলিয়ান এসেছেন বাংলাদেশ দলের সব ব্যাটারকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যেই।

সেই লক্ষ্যেই জুলিয়ান কাজ শুরু করেছেন নেদারল্যান্ডস সিরিজ সামনে রেখে। সিলেটের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে পাওয়ার হিটিংয়ের নানা কৌশল শেখাচ্ছেন টাইগার ব্যাটারদের। চার দিনের এই ক্যাম্পে কে পেয়েছেন জুলিয়ানের বিশেষ নজর?

শনিবার, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জুলিয়ান উড। সোজাসাপ্টা ভাষায় তিনি বলেন, "জাকের আলী অনিক"।

বাংলাদেশের এই পাওয়ার হিটিং কোচ বলেন,“জাকেরের মাঝে পাওয়ার হিটিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। তার হাতে বড় শট রয়েছে। সে হিট করতে জানে, এখন শুধু এটা বাস্তবায়ন করাই কাজ।”

নিজের বিখ্যাত স্লেজহ্যামার ব্যবহারের প্রসঙ্গে জুলিয়ান বলেন, “একজন কোচ হিসেবে সবসময়ই একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হয়। আমি আগে স্লেজহ্যামার ব্যবহার করেছি। একবার জাকেরের হাতে সেটা ছিল, আর আমি শুধু বলেছিলাম, ‘আমি এটা এই কাজে ব্যবহার করি।’ তখন সেটা সরাসরি ট্রেনিংয়ের অংশ ছিল না, বরং তাকে দেখাচ্ছিলাম কীভাবে আমি এটা ব্যবহার করি। তবে সামনে এগিয়ে গেলে, এটা অবশ্যই ট্রেনিংয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে।”

জাকেরের এই পথচলা সহজ ছিল না, যা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টানা তিন সেঞ্চুরির পরও জাতীয় দলের ডাক পাননি। কারণ তখন জাতীয় দলে উইকেটরক্ষক ব্যাটারদের ছিল বাড়তি ভিড়। লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহান, আর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম তখনও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলতেন। এই তিনজনের উপস্থিতিতে জায়গা পাওয়া ছিল জাকেরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন অনিক। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন শুধুমাত্র একটা সুযোগের।

আর সেই সুযোগ ২০২৪ সালে ঘরের মাঠে পেয়ে যান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। একাদশে থাকা লিটনকে ছাড়িয়ে ব্যাট হাতে জাকের তুলে নেন দুর্দান্ত এক ফিফটি, তার ৩৪ বলে ৬৮ রান, ৪টি চার, ৬টি ছক্কা। আর তখন থেকেই অনিকের ব্যাট থেকে ছুটছে ছক্কার ঝড় আর রানের ফোয়ারা।

এখন ‘পাওয়ার হিটার’ খ্যাত জাকের আলী অনিক হয়ে উঠেছেন বিশ্বসেরা পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের প্রিয় শিষ্য।
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three