সিলেটের দলে মুশফিক, দুই বছর পর ফিরলেন সায়েম
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 3 ঘন্টা আগেআপডেট: 2 মিনিট আগে
সিলেটের দলে মুশফিক, দুই বছর পর ফিরলেন সায়েম
সিলেটের দলে মুশফিক, দুই বছর পর ফিরলেন সায়েম
আসন্ন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সামনে রেখে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে সিলেট বিভাগ। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর দলে ফিরেছেন মিজানুর রহমান সায়েম। বাঁহাতি এই ওপেনারের পাশাপাশি সিলেটের দলে জায়গা পেয়েছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও।
বাংলাদেশের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করেছিলেন সিলেট বিভাগের হয়েই। এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেটের হয়ে খেলার জন্য বিসিবিতে চিঠিও দিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো বিসিবি বিশেষ বিবেচনায় সিলেট দলে মুশফিককে রেখেই দল ঘোষণা করেছে। নিজের ক্যারিয়ারের গোধুলী লগ্নে রয়েছেন মুশফিক, তাই নিজের শেষটা হয়তো তিনি করতে চেয়েছে সিলেটের হয়েই।
এবার ওপেনিংয়ে জাকির হাসানের সঙ্গী হয়ে দলে ফিরেছেন সায়েম। ২০১৯-২০ সালের এনসিএল থেকে সিলেট বিভাগীয় দলের ডাগ আউটে থাকতে থাকতে অবশেষে ২০২৩ সালে সিলেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় সায়েমের। অভিষেক মৌসুমে সায়েম খেলেছিলেন তিনটি ম্যাচ, তবে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই ওপেনার। যেখানে ৫ ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ৭৮ রান। ফলে গেল জাতীয় ক্রিকেট লিগের দল থেকে বাদ পড়েন, এরপর ফেরার মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগকে। সেখানে সূর্য তরুণ ক্রিকেটার্সের হয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন এই তরুণ ওপেনার। ৯ ইনিংসে পঞ্চাশের বেশি গড়ে করেন ৪৫৬ রান, স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৫-এর ওপরে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য উপযোগী এই পারফরম্যান্স সিলেটের মতো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেখানে প্রায় প্রতি বছরই ধার করা ব্যাটার নিয়ে খেলতে হয়। এই ৪৫৬ রান করতে সায়েম হাঁকান ২৮টি ছক্কা ও ৪১টি চার। আম্বার স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে খেলেন ৮৬ বলে ১১৩ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। তার একমাত্র সেঞ্চুরির পাশাপাশি ছিল চারটি হাফ সেঞ্চুরি।
সায়েমের মতোই ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন সিলেটের আরও দুই তরুণ, মাজহারুল ইসলাম মাজেদ ও ওয়াসিফ আকবর। যদিও তারা মূল স্কোয়াডে জায়গা পাননি, তবে রয়েছেন স্ট্যান্ডবাই তালিকায়। শেখ জামাল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে মাজেদ ১৬ ইনিংসে ত্রিশের বেশি গড়ে করেন ৪৯৪ রান। এক সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি ছাড়াও তার ব্যাটে ছিল ২৬টি ছক্কা ও ৫৫টি চার। সর্বোচ্চ ইনিংসটি তিনি খেলেন বাংলাদেশ পুলিশ ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে—৮৫ বলে ১৩১ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস। পুরো টুর্নামেন্টে মাজেদ ব্যাট করেছেন প্রায় ১২৫ স্ট্রাইক রেটে।
আরেক তরুণ ওয়াসিফ আকবর, যিনি মাজেদের উদ্বোধনী সঙ্গী ছিলেন শেখ জামালের হয়ে, ১৫ ইনিংসে প্রায় ৩৫ গড়ে করেন ৪৫১ রান। এক সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে দুটি ফিফটি। ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৯টি, আর বাউন্ডারি ৩৪টি। তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১০৩ রান, যা তিনি খেলেন খেলারঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে। তবে ওয়াসিফের স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৫-এর নিচে, যা টি-টোয়েন্টির জন্য কিছুটা মন্থর ধরা যায়।
এই দুই তরুণ স্ট্যান্ডবাই তালিকায় থাকলেও, ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ থেকেই সিলেট দলে ফিরেছেন সাহানুর রহমান। গেল আসরে সময়মতো যোগাযোগ করতে না পারায় বাদ পড়েছিলেন তিনি। ফলে সেই বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার সুযোগ হয়নি তার। তবে এবার ঢাকা লিওপার্ডসের হয়ে ১৪ ইনিংসে ২৫২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ১৬ ইনিংসে শিকার করেছেন ২৮টি উইকেট। তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৯.৩-২-১৬-৫। লিগের অন্যতম সেরা স্পিনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
জাকির-সায়েমের ওপেনিং জুটির পর সিলেটের মিডল অর্ডারে থাকছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, অলরাউন্ডার রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদ, অমিত হাসান, আসাদুল্লাহ আল গালিব এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটার তাওহিদুল ইসলাম ফেরদৌস ও মুবিন আহমেদ দিশান।
সিলেট বরাবরই আলোচনায় থাকে পেস বোলারদের জন্য। ব্যাটিংয়ে শক্তিমত্তা অন্য বিভাগের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, বোলিং বিভাগে বরাবরই এগিয়ে ছিল সিলেট। বিশেষ করে ফাস্ট বোলিংয়ে এক ধরনের বিপ্লব ঘটিয়েছে দলটি। এবারের পেস আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা জাতীয় দলের পেসার এবাদত হোসাইন। তার সঙ্গে রয়েছেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও রেজাউর রহমান রাজা, যারা গতির ঝড় তুলতে মুখিয়ে আছেন।
স্পিন বিভাগে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদের নেতৃত্বে থাকছেন সাহানুর রহমান। যেখানে অলরাউন্ড ভূমিকায় থাকবেন বা হাতি স্পিনার জাবেদ।
আকবর ও মাজেদের পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রয়েছেন তৌফিক খান তুষার, আশরাফুল হাসান রিহাদ ও মহিউদ্দিন তারেক। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপে খেলতে দুবাই থাকায় অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন নাসুম আহমেদ, জাকের আলী অনিক ও তানজিম হাসান সাকিব।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গেল জাতীয় ক্রিকেট লিগে শিরোপা জিতলেও, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের হারানো জায়গা খুঁজে পায়নি সিলেট। এমনকি ঘরের মাঠে ২০০-এর বেশি রান করেও প্রথম ম্যাচ হেরে বসেছিল তারা। এবার সেই ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামবে সিলেট বিভাগ।