বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে এইডেন মার্করাম: ‘এর চেয়ে দামি রান কখনো করিনি’

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে এইডেন মার্করাম: ‘এর চেয়ে দামি রান কখনো করিনি’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে এইডেন মার্করাম: ‘এর চেয়ে দামি রান কখনো করিনি’
লর্ডসের ছায়াঘেরা গ্যালারি, সবুজ মাঠ আর গা ছমছমে উত্তেজনা সব ছাপিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাল দক্ষিণ আফ্রিকা। দীর্ঘ ২৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তারা ছুঁয়ে দেখল প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি বিশ্ব শিরোপার স্বাদ। আর এই বিজয়ের মুহূর্তে আবেগে ভেসে গেলেন কেশব মহারাজ। কথা বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন, চোখের কোণে জমে উঠেছিল অশ্রু। সেই মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো গ্রায়েম স্মিথ, যিনি এক সময় ছিলেন দলের নেতৃত্বে, আবেগ সংবরণ করতে না পেরে জড়িয়ে ধরলেন মহারাজকে।
কণ্ঠ রুদ্ধ হলেও সমর্থকদের উদ্দেশে মহারাজের বার্তা ছিল স্পষ্ট ও হৃদয়স্পর্শী, "এটা বিশেষ, এখানে যাঁরা এসেছেন ও যাঁরা দেশে আছেন তাঁদের জন্য ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারা সম্মানের। গত পাঁচ দিন যে একতা ছিল, এটাই আমাদের দেশ। এখানে যাঁরা এসেছেন, সবার কাছে আমরা ভীষণ কৃতজ্ঞ।"
শুধু মহারাজ নন, দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ই কৃতজ্ঞতা জানালেন সমর্থকদের প্রতি। যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সহানুভূতি তারা মাঠে পেয়েছেন, তা যেন দলের সাফল্যের অংশীদার হয়ে উঠেছে।
১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মিনি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার আর কোনো আইসিসি ট্রফি জয়ের স্মৃতি ছিল না। মাঝখানে কেটেছে ১১টি সেমিফাইনাল এবং একটি ফাইনালের হতাশা। এবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটালেন বাভুমারা। যদিও যাত্রাপথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানে পিছিয়ে পড়ে তারা ছিল চাপের মুখে, কিন্তু সেখান থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে গোটা দল।
ম্যাচের শেষ দিকে ড্রেসিংরুমের চাপ ও টেনশন ছিল তুঙ্গে। সেটা স্পষ্ট ইয়ানসেনের কথায়, "বসে বসে প্রার্থনা করছিলাম, আমরা ভাগ্যবান যে কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরেছি। ড্রেসিংরুমে সবাই অনেক নার্ভাস ছিল। অনেকে চুপ করে বসেছিল, কিন্তু আমাদের দর্শকেরা প্রতিটি রানের জন্য চিৎকার করেছেন, এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই।"
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং নায়ক ছিলেন এইডেন মার্করাম। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত জয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে মার্করাম বলেন,
"কখনো এর চেয়ে দামি রান করিনি। বিষয়টা একটু অদ্ভুত, প্রথম ইনিংসে ডাক মেরে ফেরার পর সবকিছু কীভাবে ঠিকঠাক হলো। কিছুটা ভাগ্যও দরকার হয়। লর্ডস এমন জায়গা, যেখানে সবাই খেলতে চায়। দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক সমর্থক এসেছেন, এটা অন্যতম বিশেষ একটা দিন তাঁদের জন্যও।"
আর সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন টেম্বা বাভুমা। চোটের যন্ত্রণা নিয়েও খেলে গেছেন বলিষ্ঠ ইনিংস, ছিলেন দলের চালিকাশক্তি। তাঁর সঙ্গে মার্করামের ১৪৭ রানের জুটিই ভাঙে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরোধ। বাভুমাকে নিয়ে মার্করামের উচ্ছ্বাস,
"দুই তিন বছর ধরে সে আমাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। সে ড্রেসিংরুমে না ফিরে এমন একটা ইনিংস খেলেছে, যেটা অনেক মানুষই মনে রাখবে।"
প্রতিটি ব্যর্থতার ভেতর লুকিয়ে থাকে ফিরে আসার গল্প। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দল সেটাই প্রমাণ করল। আবেগ, সাহস আর সংহতির এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী হয়ে থাকল এই ফাইনাল, যা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে আগামী প্রজন্মের জন্য।