Image

মায়ের দেশের বিপক্ষে ছক্কাঘাত —নতুন রূপে সাইফ হাসান

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 4 ঘন্টা আগেআপডেট: 3 মিনিট আগে
মায়ের দেশের বিপক্ষে ছক্কাঘাত —নতুন রূপে সাইফ হাসান

মায়ের দেশের বিপক্ষে ছক্কাঘাত —নতুন রূপে সাইফ হাসান

মায়ের দেশের বিপক্ষে ছক্কাঘাত —নতুন রূপে সাইফ হাসান

সাইফ হাসানের বাবা বাংলাদেশি, মা শ্রীলঙ্কান। কিন্তু এশিয়া কাপের সুপার ফোরে তাঁর ব্যাট থেকে উপচে পড়া আগ্রাসনে হার মানতে হয়েছে মায়ের দেশ শ্রীলঙ্কাকেই। ৩৬ বলে ৬২ রানের ঝড়ো ইনিংসে নতুন রূপে ধরা দিলেন এক সময়ের টেস্ট ওপেনার সাইফ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই সাইফের বাংলাদেশ দলে ফিরে আসা, সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে প্রত্যাবর্তন। এরপর এশিয়া কাপ। এখানেও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে সাইফ। এখন যেন তিনি টি-টোয়েন্টির জন্যই জন্মেছেন!


শুরুটা ছিল কঠিন। মাত্র ১ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংস টালমাটাল অবস্থায় ছিল। সেখান থেকেই অধিনায়ক লিটন দাসের (২৩) সঙ্গে সাইফ গড়েন ৩৪ বলে ৫৯ রানের ঝোড়ো জুটি। লিটনের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন সাইফ ও তাওহীদ হৃদয়। দুজনের ব্যাটে আসে আরও একটি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি—৪৫ বলে ৫৪ রান।

সাইফের ব্যাটিংয়ের বিশেষত্ব? মাত্র ৩৬ বলে ৬২ রান, ৪টি ছক্কা আর ২টি চার। একটি আক্রমণাত্মক ইনিংস, যেটি তাঁর ক্যারিয়ারে এক নতুন মোড় এনে দিতে পারে।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাইফ কথা বলেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে। উঠে আসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ইনিংসের অভিজ্ঞতা, ব্যাটিংয়ের শক্তি ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা।


৩৬ বলে ৬২ রানের এই ইনিংসে সাইফ হারিয়ে দেন তাঁর মায়ের দেশ শ্রীলঙ্কাকে, যদিও সাইফ এখনও শ্রীলঙ্কায় নানার বাড়ি যাননি। তাঁর জন্ম সৌদি আরবে। বাবার চাকরির সূত্রে সেখানে থাকা অবস্থায় পরিচয় হয় সাইফের মা-বাবার। সৌদি আরবেই তাঁদের বিয়ে, সেখানেই সাইফের জন্ম। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে ক্রিকেটের টানে তিনি ফিরে আসেন বাবার দেশ বাংলাদেশে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পেরিয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেটেও। সেই সূত্রে একাধিকবার শ্রীলঙ্কা সফর করলেও, ব্যক্তিগতভাবে মায়ের দেশ ঘুরে দেখা হয়নি তাঁর।


টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা দাগ রাখতে না পারলেও, সাইফ নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ বলে ৬২ রানের ইনিংস তারই এক প্রমাণ। এক সময়ের টেস্ট ওপেনার এখন নিজেকে গড়ে তুলছেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটার হিসেবে।


শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংস নিয়ে সাইফ বলেন, “আম্মুর বাড়ি শ্রীলঙ্কা, আমি এখনও সেখানে যাইনি। আমি যাই না। আজকের ইনিংসটা অবশ্যই বিশেষ কিছু ছিল। দলের জন্য অবদান রাখতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। আশাবাদী, আরও ভালো কিছু করতে পারব।”


প্রথম ওভারে তানজিদ হাসান তামিম ফিরে গেলে সাইফের  সঙ্গে ক্রিজে আসেন লিটন। দুজন মিলে গড়েন ৫৪ রানের একটি দারুণ জুটি। আগের সময়গুলোতে দেখা যেত, পরপর উইকেট পড়লে ব্যাটাররা অনেকটা গুটিয়ে যেতেন। এবার তার ব্যতিক্রম। কী কথা হচ্ছিল তখন দুজনের মধ্যে?

লিটনের সাথে ম্যাচের মোড় ঘুরানো জুটি প্রসঙ্গে সাইফ বলেন, “উইকেট পড়ার পর আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল পালটা আক্রমণে যাওয়ার। খুব নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকলেও, বোলারদের বিপক্ষে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল। লিটন দা বুঝতে পারছিলেন, পরের বলে কী আসতে পারে। সেটা আমাকে বলছিলেন, আমি চেষ্টা করছিলাম অনুযায়ী খেলতে। আলহামদুলিল্লাহ, সফল হয়েছি।”


পাওয়ার প্লে-তে তাঁদের পরিকল্পনা কী ছিল? একজন ব্যাটার কীভাবে ঠিক করেন, কোন বোলারকে মারবেন, না কোন ওভারটা টার্গেট করবেন?

টাইগার এই ব্যাটারের ভাষ্য, “পাওয়ার প্লেতে যেহেতু ফিল্ডারের সীমাবদ্ধতা থাকে, তাই চেষ্টা করি আক্রমণাত্মক খেলার। আমরা দলীয়ভাবে পরিকল্পনা করি ম্যাচের আগে। প্রতিটি বোলারের বিপক্ষে আলাদা পরিকল্পনা থাকে। সবাই নিজের নিজের কৌশল অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করে।”


সাইফ হাসান ছক্কা মারতে বেশ দক্ষ। তাঁর ৩৬ বলে ৬২ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি ছক্কা ও মাত্র ১টি চার। তাঁর স্পিনারদের বিপক্ষে মারমুখী ব্যাটিংও চোখে পড়ার মতো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চারটি ছক্কার দুটিই এসেছে স্পিনার দুনিত ওয়ালেলাগের বলে। সেই শক্তির উৎস কী? কীভাবে কাজ করেছেন?

তিনি বলেন, “অনেক আগে থেকেই কাজ করছি। এখন সেটার ফল পাচ্ছি। স্পিনে সাধারণত রেঞ্জ হিটিংয়ের চেষ্টা করি। আমার শক্তির জায়গা হচ্ছে সোজা ব্যাটে খেলা, সাইডস্কিনে খেলা। উইথ দ্যা স্কিন খেলার চেষ্টা করি।”


তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে সাইফের ৫৪ রানের জুটি ছিল ম্যাচের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। হৃদয়ও খেলেছেন ৩৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস। এই ইনিংসটির খেলার আগে হৃদয়ের ব্যাটে ছিল না রান। রানের দেখা পেলেও তা ছিল না টি-টোয়েন্টি উপযোগী। এনিয়ে তাঁকে সইতে হয়েছিল অনেক সমালোচনা। আজ যখন রানে ফিরলেন হৃদয়, তখন অপরপ্রান্তে তার রাজসাক্ষী সাইফ। এমন কী সাইফের বিদায়ের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রিনও নিয়েছিলেন এই ব্যাটার। 


সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়কে নিয়ে তাই সাইফে মূল্যায়ন, “সে অবশ্যই বিশ্বমানের খেলোয়াড়। দল তাকে ব্যাক করছে। আর আজকে সে দেখিয়েছে, সে কী ধরনের প্লেয়ার! ইনশাআল্লাহ, সে বাংলাদেশের জন্য আরও ভালো কিছু করবে।”
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three