টেম্বা বাভুমা: শান্ত নেতৃত্বের নিখুঁত গণিত
৯৭ প্রতিবেদক: নাজিফা তাসনিম
প্রকাশ: 4 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 সেকেন্ড আগে-
1
ইডেন গার্ডেন্সে ঐতিহাসিক জয়, ১৫ বছর পর ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্য
-
2
তৃতীয় ওয়ানডে জিতে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান
-
3
ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর জয়
-
4
শততম টেস্টের পথে: মুশফিকের নিয়মানুবর্তিতা ও পরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি
-
5
টেম্বা বাভুমা: শান্ত নেতৃত্বের নিখুঁত গণিত
টেম্বা বাভুমা: শান্ত নেতৃত্বের নিখুঁত গণিত
টেম্বা বাভুমা: শান্ত নেতৃত্বের নিখুঁত গণিত
টেম্বা বাভুমাকে প্রথম দেখলে মনে হয় না তিনি ইতিহাস বদলে দেওয়ার মানুষ। শান্ত, সংযত, কখনো অতিরিক্ত আবেগে ভাসেন না, তাঁর উপস্থিতি যেন চাপের মুহূর্তেও এক টুকরো নীরবতা। কিন্তু ক্রিকেটের ইতিহাসে কখনো কখনো এমনই কেউ এসে চুপচাপ বদলে দেন পুরোনো নিয়ম, দীর্ঘস্থায়ী রেকর্ড, আর মানুষের ধারণা। বাভুমা ঠিক সেইরকম এক চরিত্র।
দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্যমান যেন পাল্টে যেতে শুরু করেছিল তাঁর নেতৃত্বে। গত জুনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো শুধু একটি শিরোপা জয় নয় এটা ছিল তাঁর নেতৃত্বদানের প্রথম দশ ম্যাচের নবম জয়। সেই মুহূর্তেই তিনি বসে পড়েছিলেন ইংল্যান্ডের পার্সি চ্যাপম্যানের পাশে। কিন্তু সেখানে একটি বড় পার্থক্য ছিল চ্যাপম্যান প্রথম দশ ম্যাচে একটি হেরেছিলেন, বাভুমা ছিলেন নিখুঁতভাবে অপরাজিত।
কলকাতার গল্পটা ধরুন, অভিজ্ঞ অধিনায়কদেরও কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি। দক্ষিণ আফ্রিকার নিখুঁত রেকর্ড তখন ভেঙে পড়ার মুখে। কিন্তু বাভুমা, তাঁর চরিত্রের মতোই, ধীরে ধীরে ম্যাচটাকে নিজের দিকে টেনে আনেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ৫৫ রান সেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয়, অক্ষত রাখে তাঁর অপরাজেয় ধারা। তারপর ভারতকে ৯৩ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে তাঁর দল তুলে নিয়েছিল নাটকীয় এক জয়।
এই জয়ের পরই ইতিহাস তাঁর সামনে মাথা নত করতে শুরু করে। ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার কোনো অধিনায়ক প্রথম ১১ ম্যাচে ১০টি জয় পেলেন। এই জায়গায় কেউ ছিলেন না এর আগে। পার্সি চ্যাপম্যান প্রথম ১০ ম্যাচে ৯টি জিতেও পরে আর কোনও জয় পাননি। সেই তুলনায় বাভুমা যেন ইতিহাসের সিঁড়ি ধাপে ধাপে উঠে যাচ্ছেন, এবং প্রতিটি ধাপ পা ফেলছেন এক অবিশ্বাস্য স্থিরতায়।
আরেকটি অর্জনও তাঁর ঝুলিতে, অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার কোনো টেস্ট হারার আগেই ১০টি জয় পেয়েছেন মাত্র দুই জন।প্রথমজন ইংল্যান্ডের মাইক ব্রিয়ারলি (যদিও তিনি এই ‘১০ম জয়’ পেয়েছিলেন ১৫তম ম্যাচে)। দ্বিতীয়জন টেম্বা বাভুমা, যিনি তা করেছেন মাত্র ১১ ম্যাচেই। আর এখানেই তিনি হয়ে উঠছেন অন্যদের থেকে পুরোপুরি আলাদা।
সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো এই সব অর্জন কোনো ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়। কোনো আগ্রাসী প্রচারে নয়। বাভুমা খেলেনও নীরবে, নেতৃত্ব দেনও নীরবে। তবুও তিনি গড়ে তুলেছেন এমন এক রেকর্ড, যা টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কদের দীর্ঘ ইতিহাসেও পাওয়া যায় না সহজে।
আরো বড় সত্য হলো বাভুমা যদি আজই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন, তবুও তিনি রেখে যাবেন এমন এক রেকর্ড যা হয়তো বহু বছর টিকে থাকবে। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড দশকের পর দশক ধরে যা ছিল অস্ট্রেলিয়ার ‘বিগ শিপ’ ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের দখলে। আর্মস্ট্রং ১০ ম্যাচে ৮ জয় ও ২ ড্র করে ছিলেন ‘অপরাজেয় নেতার’ প্রতীক।
কিন্তু বাভুমা, তুলনামূলক ছোট দেহ আর বিশাল মানসিক শক্তি নিয়ে, সেই জায়গাটাকেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন। টেম্বা বাভুমার গল্প আসলে নেতৃত্বের গল্প নয় এটা ধৈর্য, নীরবতা আর অচঞ্চল আত্মবিশ্বাসের গল্প। যখন সবাই শব্দের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেখাতে ব্যস্ত, তিনি দেখিয়েছেন যে নেতৃত্ব কখনো কখনো খুবই শান্ত, খুবই মাপা, এবং প্রায় অদৃশ্য এক শিল্প।
