সিরাজের দুর্ভাগ্যজনক আউটে লর্ডস জয় করল ইংল্যান্ড

সিরাজের দুর্ভাগ্যজনক আউটে লর্ডস জয় করল ইংল্যান্ড
সিরাজের দুর্ভাগ্যজনক আউটে লর্ডস জয় করল ইংল্যান্ড
লর্ডসে পাঁচ দিনের রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে শেষ হাসি হাসলো ইংল্যান্ড। মাত্র ১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয়ের খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু ১৭০ রানে অলআউট হয়ে ২২ রানের হারে মুখ থুবড়ে পড়ে তারা। সিরিজে এগিয়ে গেল বেন স্টোকসের দল, পাঁচ ম্যাচ শেষে এখন তারা এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
দুই দলের প্রথম ইনিংসে রান ছিল সমান দু'দলই করেছিল ৩৮৭। সেই ব্যালান্স ভেঙে ম্যাচ রূপ নেয় দ্বিতীয় ইনিংসের লড়াইয়ে। ইংল্যান্ড করেছিল ১৯২, ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯৩ রানের। লক্ষ্য ছোট হলেও লর্ডসের পঞ্চম দিনে ব্যাট করা সহজ নয়, তার উপর ইংলিশ বোলারদের ধারালো স্পেল। দিনের শুরুতেই ভারত পড়ে যায় চাপে, বিশেষ করে রাহুল আউট হওয়ার পর। তার আগে যদিও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে পৌঁছেও বাঁচাতে পারেননি দলকে।
রিশাভ প্যান্টের কাছেও অনেক আশা ছিল ভারতের, কিন্তু দ্রুত গতির জোফরা আর্চারের একটি দুর্দান্ত ফুল-লেংথ ডেলিভারি তাকে ফিরিয়ে দেয় মাত্র ৯ রানে। তারপর থেকে রবীন্দ্র জাদেজা একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়তে থাকেন, একে একে হারাতে থাকেন সঙ্গী। ৭১ রানে ৪ উইকেট থেকে ৮২ রানে ৭ উইকেট। এই ধসটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে জাদেজা হাল ছাড়েননি। আগের তিন টেস্টে যেমন ধারাবাহিক ছিলেন, এবারও তেমনি। আর্চার ও স্টোকসের গতির বিপক্ষে ধৈর্য রেখে ব্যাট করে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। ছিলেন একেবারে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৬১ রানে।
তার সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ সিরাজ, তখন ভারতের রান ১৪৭/৯। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আর মাত্র ৪৬ রান। ইংল্যান্ড তখন একটু চিন্তায়, কারণ এক প্রান্তে জাদেজা দৃঢ়, আর অন্য প্রান্তে সিরাজ সময় ক্ষেপণ করে যাচ্ছেন। এমন সময় চোট থেকে ফিরে আসা শোয়েব বশির বল হাতে তুলে নেন। আঙুলের চোটে বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন এই তরুণ অফস্পিনার, কিন্তু ঠিক সময়েই তার ম্যাজিক কাজ করলো। সিরাজ তার বলে ব্যাট-প্যাডের মাঝে গ্যাপে বল লাগিয়ে স্টাম্প ছুঁয়ে ফেলেন, বলটি খুব একটা জোরে লাগেনি, কিন্তু লেগ বেইল খসে পড়তেই শেষ হয় ভারতের ইনিংস। সিরাজ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন স্টাম্পের দিকে, মাঠজুড়ে তখন ইংল্যান্ডের উল্লাস।
এর আগে বেন স্টোকস ও জফরা আর্চার ছিলেন দুর্দান্ত। স্টোকস বল হাতে আবারও প্রমাণ করেছেন, তার জায়গা এখনও কতটা অমূল্য। তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট, তার স্পেলই ভারতের মিডল অর্ডার ভেঙে দিয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘ চার বছর পর টেস্ট দলে ফেরা জফরা আর্চার ছিলেন আগ্রাসী, নিয়েছেন ৩ উইকেট তিন স্পেলে, এর মধ্যে ছিল সুন্দর ও পান্তের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
ভারতের জন্য আফসোসের জায়গা অনেক। প্রথম ইনিংসে সমান রান করেও এমনভাবে ম্যাচ হেরে যাওয়া মানসিকভাবে ধাক্কা দিয়েছে দলকে। সিরিজের মাঝপথে এসে জাদেজা ছাড়া কেউ ধারাবাহিক নন, টপ অর্ডারের ব্যর্থতা এবং মিডল অর্ডারের ভাঙন বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিপরীতে ইংল্যান্ড তাদের ঘরের মাঠে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে। এই জয় লর্ডসে তাদের এক অনন্য রেকর্ড গড়ল। ২০১৯ সালের পর তারা এখানে এখনও অপরাজিত।