টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের ছায়ায় মুস্তাফিজের উজ্জ্বলতা
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 5 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 মিনিট আগে
টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের ছায়ায় মুস্তাফিজের উজ্জ্বলতা
টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের ছায়ায় মুস্তাফিজের উজ্জ্বলতা
বাংলাদেশ ক্রিকেটে গত দশকে এক নাম আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পেস বোলিংয়ে—মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষেকের পর থেকেই তিনি শুধু উইকেট শিকারীই নয়, দলের সংকট মোকাবিলায় পেস বোলিংয়ে যে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা তাঁকে আলাদা করেছে। পাকিস্তান থেকে শুরু করে ভারত, আইপিএল থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল পর্যন্ত সফলতার ছোঁয়া। সাকিব আল হাসানের সমান উইকেট শিকার, মুস্তাফিজ যেন বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মুস্তাফিজুর রহমানের আগমন ধুমকেতুর মতো ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকেই আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। এরপর ঘরের মাঠে কাটারে বিধ্বস্ত করেন ভারতের বিরাট ব্যাটিং লাইন-আপ। সেই সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে আইপিএলে ডাক পান মুস্তাফিজ। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলতে গিয়ে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হয়েছিলেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে এখন মুস্তাফিজের অপ্রতিরোধ্য বিচরণ দৃশ্যমান। কাটার বল দিয়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের বিপাকে ফেলছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও যেন অপ্রতিরোধ্য মুস্তাফিজ। দেশের বাইরে-দেশে নিজের বোলিং দক্ষতায় জায়গা করে নিচ্ছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আরও পরিপক্ক করে তুলছেন এই পেসার।
তাঁর বোলিংয়ে যেমন নজর কাড়ছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তেমনি মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন টাইগার পেস বোলিং কোচ শন টেইট। বুলবুল তার মধ্যে ভারসাম্য দেখছেন, আর টেইট তার অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ।
শন টেইট বলেন, “আমি তার বোলিং দেখে সন্তুষ্ট। মুস্তাফিজ আমাদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। তিনি দক্ষ নেতা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে আছেন। প্রমাণিত পারফর্মার হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতেও তিনি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।”
অন্যদিকে বোলিংয়ে তার পরিবর্তন ও উন্নতির কথা বললেন বুলবুল, "মুস্তাফিজ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফাস্ট বোলার। আগে যখন বল করতে যেতেন, তাড়াহুড়া করতেন। এখন সময় নিয়ে বল করছেন। যে ধরনের বোলিংয়ের জন্য মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি দরকার, সেই অনুযায়ী বোলিং করছেন তিনি। এই পরিবর্তন ও উন্নতি সত্যিই চোখে পড়ার মতো।"
সাম্প্রতিক সময়ে বল হাতেও দুর্দান্ত মুস্তাফিজ। রান আটকানো এবং সময় বুঝে বোলিং করার দক্ষতা তার অন্যতম গুণ। দলের যখন উইকেট প্রয়োজন, সে সময় উইকেট এনে দেওয়াই তার কাজ। বাংলাদেশের সর্বশেষ ১০ টি-টোয়েন্টিতে তার উইকেট সংখ্যা ১৫। চলতি এশিয়া কাপে চার ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছেন, যেখানে ইকোনমি রেট ৭-এর আশেপাশে।
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন মুস্তাফিজ। মাত্র ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। অন্য পেসাররা ১২ ওভারে ১০৬ রান খরচ করেছে। মুস্তাফিজের বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ভেঙে পড়ে, বিশেষ করে শেষ ওভারে কামিন্দু মেন্ডিস ও হাসারাঙ্গাকে ফেরানো উল্লেখযোগ্য।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই পারফরম্যান্সে মুস্তাফিজ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১১৭ ম্যাচে ১৪৯ উইকেট পূর্ণ করেন, যা সাকিব আল হাসানের সমান। তবে মুস্তাফিজ সাকিবের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে এই উইকেট সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ উইকেটশিকারির দৌড়ে আছেন এবং সক্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে রশিদ খানের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাইফ হাসান বলেন, “মুস্তাফিজ সবসময়ই ভালো বোলিং করছেন। গত কয়েক মাস ধরে দারুণ ছন্দে আছেন। আজও কম রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন। তিনি বিশ্বমানের বোলার। সব পরিস্থিতিতেই তার পারফরম্যান্স দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
সাইফ আরও যোগ করেন, “মুস্তাফিজ যখনই বোলিং করেন, দল সাধারণত সংকটময় অবস্থায় থাকে। সেই সময় তিনি এসে দলকে সহায়তা করেন এবং প্রায় সব সময় নিজের সেরাটা দেন। তার মতো ম্যাচপ্লেয়ার দলের কঠিন সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার দাসুন শানাকা মুস্তাফিজের বোলিংকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, “মুস্তাফিজ ক্লাস বোলার। আইপিএলে খেলেছেন এবং দেশের হয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা নিয়ে (ফিজের কাছে পরাস্ত) চিন্তার কিছু নেই। তাকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত।”
ম্যাচশেষে বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, “মুস্তাফিজ কতটা ভয়ংকর বোলার, সেটা আমরা সবাই জানি। আজকের ম্যাচে তার বোলিং দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯তম ওভারে তার বোলিং এবং শেষ ওভারে তাসকিনের বোলিং ম্যাচের গতি বদলে দিয়েছে।”