Image

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে স্মৃতিচারণে মুশফিক...

৯৭ প্রতিবেদক:

প্রকাশ: 1 দিন আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে স্মৃতিচারণে মুশফিক...

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে স্মৃতিচারণে মুশফিক...

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে স্মৃতিচারণে মুশফিক...

লর্ডস...ক্রিকেট বিশ্বের পবিত্র তীর্থভূমি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালের ২৬ মে এই মাঠেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার পা রেখেছিলেন এক কিশোর। বয়স তখন মাত্র ১৮। বাংলাদেশ দলে ছিলেন আকস্মিকভাবে, কিন্তু তার উপস্থিতি যেন সময়ের আগে অনেক বড় বার্তা দিয়ে এসেছিল—এই ছেলেটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে।

দু’দশক পর সেই বার্তার সত্যতা এখন হাতের মুঠোয়। আজ ২০২৫ সালের ২৬ মে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের ২০ বছর পূর্ণ হলো। এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি শুধু একজন ক্রিকেটার হয়ে থাকেননি, হয়ে উঠেছেন অধ্যবসায়ের প্রতীক, স্থায়িত্বের নজির এবং ক্রিকেটে আত্মনিবেদনের এক অপরিহার্য নাম।

২০০৫ সালের ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের স্কোয়াডে মুশফিকের অন্তর্ভুক্তি ছিল অনেকের কাছেই বিস্ময়। তখন তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র, বগুড়ার ছেলে—যার ঘরে বইয়ের পাশে ব্যাটও ছিল একই গুরুত্বে। কিন্তু বিস্ময়কে ছাপিয়ে তিনি লর্ডসের মাটিতে টেস্ট খেলা ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে নিজের নাম লিখে ফেলেন। লর্ডসের ঘাসে পা রেখেই তার চোখে হয়তো তখন একটা স্বপ্ন—যা আজ বাস্তবেরও বড় কিছু।

বাংলাদেশের ক্রিকেট মানেই তখন ছিল টিকে থাকার লড়াই। আর মুশফিক ছিলেন সেই লড়াইয়ের নিঃশব্দ যোদ্ধা। উইকেটের পেছনে নিখুঁত কিপিং, মাঝের ওভারে অবিচল ব্যাটিং আর ড্রেসিংরুমে দায়িত্বশীল উপস্থিতি—এই ত্রয়ীর সমন্বয়ে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন দলের স্তম্ভ।

অধিনায়কত্ব, সমালোচনা, চোট, ব্যাটিং পজিশনের পরিবর্তন—যত চ্যালেঞ্জই আসুক, মুশফিক বরাবরই থেকেছেন প্রস্তুত। কখনও মাথা নিচু করেননি, কখনও হাল ছাড়েননি।

আজ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন ৯৬টি টেস্ট, করেছেন ৬ হাজারের বেশি রান। ২৭৪টি ওয়ানডে খেলে তুলেছেন ৭৭৯৫ রান, আর টি-টোয়েন্টিতে ১০০টির বেশি ম্যাচ খেলে অর্জন করেছেন ১৫০০ রান। সংখ্যাগুলো বড়, কিন্তু সংখ্যার বাইরেও তার প্রভাব আরও গভীর।

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি, প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৫ হাজার রান, ওয়ানডেতে একাধিক সেঞ্চুরি করা ‘মিডল অর্ডারের স্তম্ভ’—এসবই তাকে এনে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

২০২২ সালে তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। গত মার্চে বিদায় জানান ওয়ানডে ক্রিকেটকেও। এখন কেবল টেস্টেই সক্রিয় মুশফিক। সামনে আছে আর মাত্র চারটি ম্যাচ। খেলতে পারলেই হবেন বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার যিনি খেলবেন ১০০টি টেস্ট।

তবে সময়ের সাথে চাপও বেড়েছে। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার ব্যাট কথা বলেনি। প্রশ্ন উঠেছে ফর্ম নিয়ে। কিন্তু মুশফিক জানেন কীভাবে ফিরে আসতে হয়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বারবার দেখিয়েছেন, সময়মতো জবাব দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা তার আছে।

ফেসবুকে নিজের ২০ বছরের ক্রিকেট জীবনের উপলক্ষ্যে দেওয়া পোস্টে মুশফিক লিখেছেন—“আলহামদুলিল্লাহ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ২০ বছর পূর্ণ হলো।” সেই সঙ্গে দিয়েছেন কিছু দুর্লভ মুহূর্তের ছবি, যেগুলো যেন ইতিহাসের খণ্ডচিত্র।

এই ছবিগুলোর পেছনে লুকিয়ে আছে ঘাম, কষ্ট, সংগ্রাম আর অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। মুশফিকুর রহিম এখন কেবল একজন ক্রিকেটার নন—তিনি অনুপ্রেরণা। তরুণ ক্রিকেটারদের চোখে তিনি আত্মনিবেদনের প্রতিমূর্তি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অধ্যায়ের নাম মুশফিকুর রহিম। ২০ বছরের পথচলায় তিনি শিখিয়েছেন—সততা, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস থাকলে স্থায়িত্ব পাওয়া যায়, প্রাপ্য সম্মানও আসে। হয়তো একদিন ব্যাট থামবে, গ্লাভস তুলে রাখা হবে, কিন্তু মুশফিকুর রহিম নামটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে থেকে যাবে চিরস্থায়ী এক চিহ্ন হয়ে।

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three