জাহানারার অভিযোগে তোলপাড় নারী ক্রিকেট, তদন্তে বিসিবি

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 2 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
জাহানারার অভিযোগে তোলপাড় নারী ক্রিকেট, তদন্তে বিসিবি

জাহানারার অভিযোগে তোলপাড় নারী ক্রিকেট, তদন্তে বিসিবি

জাহানারার অভিযোগে তোলপাড় নারী ক্রিকেট, তদন্তে বিসিবি

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে যৌন হয়রানির অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। নারী দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু। সেখানে মঞ্জু ছাড়াও আরো একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের তালিকায় আরও রয়েছেন দলের কোচ, ম্যানেজার ও ফিজিও।


অভিযোগগুলো যাচাই করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জানা গেছে, জাহানারার পর আরও কয়েকজন নারী ক্রিকেটারও যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলেছেন।


তদন্ত কমিটিতে আছেন বিসিবির নারী পরিচালক রুবাবা দৌলা। তবে অভিযোগের পরিধি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান বিবেচনায় তাঁর কমিটিতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


শনিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং পরিচালক আমজাদ হোসেন তদন্ত প্রক্রিয়া ও বোর্ডের অবস্থান তুলে ধরেন।


আমজাদ হোসেন বলেন,“আপনারা জানেন, ৭২ ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। সেটি আমাদের সবাইকে দারুণভাবে আলোড়িত করেছে। আমাদের মনে এক ধরনের ভূকম্পন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওটি খতিয়ে দেখার পর ক্রিকেট বোর্ড থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে আছেন আপিল বিভাগের একজন অবসরে যাওয়া বিচারপতি।”


তিনি আরও জানান, “কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করে একটি প্রতিবেদন ও মতামত দেবে। সেই প্রতিবেদনের একটি কপি বিসিবি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব। কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে।”


তদন্ত কমিটিতে রুবাবা দৌলার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “রুবাবা আমাদের একমাত্র নারী পরিচালক। এই তদন্ত কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করা। কমিটিতে একজন বোর্ড-প্রতিনিধি থাকা উচিত, কারণ বোর্ডের প্রয়োজনীয় তথ্য তাকেই সরবরাহ করতে হয়। ঘটনাটা ২০২১–২২ সালের; আমাদের জানা মতে তখন বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছিল। এরপর ক্রিকেট বোর্ডে কেউ লিখিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু বিষয় জেনেছি, তবুও আমরা তদন্ত কমিটি করেছি।”


তিনি আরও বলেন,“আমার বলতে চাওয়া হলো, অনেক কিছুই আমরা দেখছি। যদি কেউ অভিযোগ করেন, সেটা লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে বোর্ডে জমা দিতে পারেন। তখন বোর্ড বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। সংবাদে অনেক কিছু প্রকাশিত হয়, আমরা কোনো কিছুকে সত্য বা মিথ্যা বলছি না।”


জাহানারার পাশাপাশি অন্যদের অভিযোগও তদন্তের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির পরিচালক আমজাদ হোসেন। তাঁর ভাষায়,
“কমিটিতে থাকা সদস্যরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ। তারা জাহানারা আলমের বিষয়টি ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলোও স্বাধীনভাবে তদন্ত করবেন, প্রতিবেদন ও মতামত দেবেন, এবং আমরা সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”


তিনি আরও বলেন, “যে কোনো ধরনের হয়রানি, মৌখিক, শারীরিক, মানসিক বা সাইবার—এসবের বিপরীতে আমাদের বোর্ডের জিরো টলারেন্স রয়েছে। আমরা কোনো রকম ছাড় দেব না এবং কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”


আমজাদ যোগ করেন, “আমরা কোনো সন্দেহ বা আবেগের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। সবার লক্ষ্য একটাই—সুষ্ঠু তদন্ত। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তার বিচার আমরা চাই, সবাই চাই। এ কারণেই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতি আস্থা রেখে কাজ করতে দিতে হবে। এমন তদন্ত চাই না, যার দিকে পরে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠবে।”


বিসিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমজাদ হোসেন বলেন, “আমরা চাই, তদন্ত প্রক্রিয়াটি প্রভাবমুক্ত থাকুক। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”