উপেক্ষা পেরিয়ে উজ্জ্বল সফর

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 4 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 ঘন্টা আগে
উপেক্ষা পেরিয়ে উজ্জ্বল সফর

উপেক্ষা পেরিয়ে উজ্জ্বল সফর

উপেক্ষা পেরিয়ে উজ্জ্বল সফর

বছর ঘুরে জাতীয় ক্রিকেট লিগ এলেই নতুন উদ্দীপনায় মাঠে নামেন ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। তবে সিলেটের তরুণ পেসার সফর আলীর ভাগ্যে বছরে একটির বেশি ম্যাচ জোটে না। কারণ, সিলেটের পেস বিভাগ দেশের অন্যতম শক্তিশালী ইউনিট। এবাদত হোসাইন, খালেদ আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিবের মতো জাতীয় দলের তারকা পেসারদের সঙ্গে রয়েছেন আবু জায়েদ রাহী ও রেজাউর রহমান রাজা। এমন তারকায় ভরা দলে জায়গা পাওয়া সফরের জন্য শুধু কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জ।


তবুও সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণে ভুল করেন না এই তরুণ পেসার। ২০২৩ সালের জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ ম্যাচে অভিষেক হয় তার, আর সেই ম্যাচেই নিজের সামর্থ্যের জানান দেন। এরপর আবার দীর্ঘ অপেক্ষা। এক বছর পর ২০২৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ পান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাঠে নামার। সুযোগ পেলেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন সফর আলী। রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে ২০২৪ সালের ম্যাচে বল হাতে আলোড়ন তোলেন তিনি। বছর ঘুরে পাওয়া সেই সুযোগে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটান এই তরুণ পেসার।


তবে সেই ম্যাচের পরই থেমে যায় সিলেটের হয়ে সফরের পথচলা। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ শেষে যখন শুরু হয় এনসিএল টি-টোয়েন্টি, তখনও তাকে বিবেচনায় নেয়নি সিলেট দল। অথচ বাকি পেসারদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। এনসিএলের প্রথম টি-টোয়েন্টি আসরে সিলেটের বোলারদের করুণ অবস্থা ছিল, ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলাররাও ব্যর্থ হন। এবাদত হোসাইন পাঁচ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েও জায়গা পাননি সেরা পাঁচে। দুই ম্যাচ বেশি খেলা সৈয়দ খালেদ আহমেদও উইকেট পান মাত্র দশটি।


এরপর বছর ঘুরে আবারও শুরু হয় এনসিএল টি-টোয়েন্টি। সিলেটের বোলিং পারফরম্যান্স আরও নাজুক। এবাদত এবার পাঁচ ম্যাচে নেন মাত্র পাঁচ উইকেট, রাজা পান তিনটি। সিলেটের মূল বোলারদের কারও ইকোনমি আটের নিচে নয়। এমন পারফরম্যান্সের পরও সফরের জন্য দলের দরজা খোলেনি। প্রথম শ্রেণির সর্বশেষ ম্যাচে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া বোলারকে আবারও উপেক্ষা করা হয়।


তবে ভাগ্যের দরজা খুলেছে অন্য জায়গায়। সিলেটের দলে জায়গা না হলেও সফরের নতুন ঠিকানা খুলনা বিভাগ। আর সেখানে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত। চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে ১৯ ওভারে ৫৫ রানে তুলে নেন পাঁচ উইকেট। তার শিকার জাতীয় দলের তারকা পারভেজ হোসেন ইমন, শাহাদাত হোসেন দিপু ও নাঈম হাসান। খুলনার জার্সিতে সিলেটের এই তরুণ যেন নিজেকে নতুন করে চিনিয়ে দিলেন।


নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সফরের কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার সুর। তিনি বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই লাগছে। সবসময় বেস্ট পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করি। যে দলেরই হয়ে খেলি না কেন, সবকিছু মিলে আলহামদুলিল্লাহ।”


সিলেটের হয়ে এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে না খেলতে পারায় আক্ষেপ আছে তার মনে। তবে ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস রেখে সফর বলেন, “এবার খুব ইচ্ছা ছিল টি-টোয়েন্টি খেলার। কিন্তু আল্লাহ রিজিকে রাখেননি। এটা নিয়ে আফসোস নেই। আল্লাহ যা করেন, ভালো জন্যই করেন। আল্লাহই উত্তম পরিকল্পনাকারী।”


২০২৩ সালে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত তার নামের পাশে মাত্র তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। এত কম ম্যাচ সংখ্যা দেখে হতাশা আসে কিনা জানতে চাইলে সফর বলেন, “খারাপ লাগে মাঝে মাঝে। কিন্তু সিলেটে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা ফ্রি থাকলে ম্যাচ খেলে, তাই আমার সুযোগ আসে না। ইনশা আল্লাহ, সামনে ভালো কিছু হবে।”


জাতীয় ক্রিকেট লিগে সামনে হয়তো খুলনা বিভাগের মুখোমুখি হবে সিলেট। সব কিছু ঠিক থাকলে সেই ম্যাচে মাঠে নামার সম্ভাবনাও আছে সফরের। নিজের পুরনো দলের বিপক্ষে খেলতে কেমন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আল্লাহ চাইলে ভালো হবে ইনশা আল্লাহ। আমি তো ম্যাচ খেললে ভালো করার জন্যই খেলব।”


সিলেট ছেড়ে খুলনায় এসে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করা সফরের লক্ষ্য এখন আরও বড়। তিনি বলেন, “আপাতত নিজের লক্ষ্য ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগ শেষ করা। সামনে বিপিএল আছে, ইচ্ছে আছে খেলার। এখন আল্লাহ ভরসা।”


সফর আলীর গল্পটা এক তরুণ ক্রিকেটারের ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস ও বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। জাতীয় দলের তারকাদের ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে সুযোগ পেলেই নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। সিলেটে উপেক্ষিত এই তরুণ খুলনায় গিয়েই যেন জানিয়ে দিলেন, সুযোগ না পেলেও স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি তার।